জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পঞ্জিকার অনুশাসন মানছে না ঋতুচক্র। পৌষের সপ্তাহ পেরুলেও দেশের উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চল বাদে দেশময় শীত এখনো জেঁকে বসেনি।
তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে কম। বাতাসে জলীয় বাষ্পের প্রাধান্য থাকায় শীতের শুষ্ক হাওয়া বিস্তৃত হতে পারছে না। গাঙ্গেয় উপকূলে কনকনে উত্তরে হাওয়া ঢুকতে পারছে না।
ফলে রাতে-প্রভাতে খানিকটা শীত শীত আমেজ হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তাপে তা মিইয়ে আসছে। এক সপ্তাহ অবধি রাজধানীসহ অধিকাংশ জেলায় শীতের যে আমেজ ছিল গতকাল থেকে তা ম্রিয়মাণ হয়ে আসছে। চলমান ঠাণ্ডা হাওয়া বিদায় নেওয়া শুরু করেছে।
আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, গতকাল সন্ধ্যার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের আকাশে ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন স্থানে বায়ুর নিম্নচাপ অবস্থা শুরু হয়েছে।
গতকাল বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশের ওপরে অপেক্ষাকৃত গরম হাওয়া প্রবাহিত হওয়া শুরু করেছে। বায়ুর নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী রবিবার ও সোমবার সিলেট, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কোনো কোনো জেলার ওপর দিয়ে হালকা পরিমাণে বৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া মডেল। এরপর আবার তাপমাত্রা ক্রমেই হ্রাস পেতে পেতে চলতি ডিসেম্বরের শেষার্ধে বা জানুয়ারিতে শৈত্যপ্রবাহ ফিরবে। তীব্রতা থাকবে তুলনামূলক বেশি।
আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, সাধারণত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সূর্য দূরে সরতে থাকে। দূরত্ব বাড়ার ফলে সৌরশক্তির পরিমাণ কমে আসে। দিন ছোট হয়ে আসে, রাত বড় হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ছিল বছরের দীর্ঘতম রাত। দীর্ঘতম রাত হয় সূর্যের দক্ষিণায়নের কারণে। এতে দিনে সূর্যকিরণ কম পায় রাতে বিকিরণের সময় বেশি থাকে।
সে কারণে রাত ঠান্ডা থেকে ঠান্ডাতর হতে থাকে। সে হিসেবে ডিসেম্বরের শেষের দিকে সাময়িকভাবে বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তর সান্ধ্য বার্তায় জানিয়েছে, আগামী পাঁচ দিনে সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের উত্তর-উত্তরপূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, অস্থায়ীভাবে সারা দেশে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। গতকাল সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ নাজমুল হুদা বলেন, ডিসেম্বরের শেষে ও এর পরবর্তী সময়ে বঙ্গোপসাগরে যে লঘুচাপের সৃষ্টি হবে সেগুলো পশ্চিম দিকে অর্থাত্ ভারতের দক্ষিণাঞ্চল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার দিকে সরে যাবে।
বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়ার ফলে সেটার প্রভাব বাংলাদেশে থাকবে না। এতে শীতের তীব্রতা অনেকটা বেড়ে যাবে।
সে হিসেবে ডিসেম্বরের শেষে ভালোভাবে শীত পড়বে। বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কাছাকাছি হিমালয় পর্বতমালা থাকায় সেখানে শীতের অনুভূতি সবার আগে দেখা দেবে এবং তীব্রতা থাকবে তুলনামূলক বেশি।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মেঘমুক্ত আকাশ থাকা, উত্তর-পশ্চিমের শীতল বায়ুপ্রবাহ না থাকা, বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন লঘুচাপ সৃষ্টির কারণে আবহাওয়ায় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
যার ফলে গাঙ্গেয় উপকূলে কনকনে উত্তরে হাওয়া ঢুকতে পারছে না। এ কারণে রাতে ও ভোরের দিকে শীতার্ত আমেজ থাকলেও রোদ্রের তাপ বাড়লে দুপুরের দিকে অনেকটা কমে আসছে শীত।
তিনি বলেন, বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সামনের আরো সম্ভাব্য দুটি লঘুচাপের একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
তখন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যে শীতল বাতাস বয়ে যাওয়ার কথা সেটায় ব্যত্যয় ঘটবে। সাধারণত ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় না। কিন্তু এবার হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ই শীতের তীব্রতা না থাকার অন্যতম কারণ। তাছাড়া আরেকটি কারণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি। গত বছরের চেয়ে এ বছর তাপমাত্রা বেশি ছিল।